দেখি নাই ফিরে - (Part-82)

না। ওরা ছবিতেই থাকুক।
আমি দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম। দরজাটা সামান্য ভেজিয়ে দিলাম। ফিরে এসে জ্যেঠিমনি সামনে দাঁড়ালাম। জ্যেঠিমনি আমাকে দেখছেন। বুঝতে পারছি ভেতরে ভেতরে অসীম যুদ্ধ চলছে। আমি আবার মিত্রা আর ইসির ফটোটার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
জ্যেঠিমনি আবার সেই অতীতে ফিরে যাওয়া যায় না। দুই বোন একসঙ্গে তোমার কাছে আসবে, থাকবে খুনসুটি করবে। তুমি তাদের সন্তানদের সঙ্গে খেলা করবে গল্প করবে, যেমন তুমি পিকুর সঙ্গে করো।
সে হয় না অনি।
কেনো হয় না জ্যেঠিমনি। একটা ভুলকে গেড়ো দিয়ে রেখে লাভ কি।
ভুল সেটা ভুল, তাকে শোধরানো যায় না।
কেনো যায় না জ্যেঠিমনি, আমি শুনেছি মেনেনেওয়া মানিয়ে নেওয়া মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম। আমি যদি সব জানার পর মেনে নিতে পারি, তোমাদের আপত্তি কোথায় ?
তুমি কি জানো।
মনে মনে বললাম এই সুযোগ অনি, তুই হাত ছাড়া করিস না। নিজেকে উজার করে দে। তুই জিতে যাবি।
আমি ধীরে ধীরে ওই ফটোর দিকে মুখ করেই সমস্ত কথা বলে চললাম। কখনো গলা ভাড়ি হয়ে আসছে কখনো ধরে যাচ্ছে। কখনো গলা বুঁজে আসছে। আমি থামি নি। থামলাম না। কতোক্ষণ বলেগেছি জানি না। নিজের কথা বলেছি। অফিসের কথা বলেছি। মিত্রার কথা বলেছি। মিত্রা কোথা থেকে কোথায় তলিয়ে গেছিলো তা বলেছি। সেখান থেকে কিভাবে তাকে উদ্ধার করে এনেছি তা বলেছি। বুঝতে পেরেছি কথা বলতে বলতে কখনো আমি ভীষণ ইমোশনাল হয়ে পরেছি। শেষে পর্শুরাতে মিত্রার বলা সমস্ত কথা আমি উগড়ে দিলাম।
একটু থামলাম।
এরপরও কি তুমি বলবে জ্যেঠিমনি যে মেয়েটা তার সবচেয়ে আনন্দের দিনে তার গর্ভধারিণী মাকে একটিবার দেখতে চায়, সে খুব অপরাধ করছে। তার তো কোনো অপরাধ নেই। কেনো সে অন্যের অপরাধ নিজের ঘারে সারাজীবন বয়ে বেরাবে ? তাই যদি হয়, কেনো তুমি ন’মাস দশদিন তাকে গর্ভে ধারণ করেছিলে ? কিসের লোভ, কিসের লালসা ? কি জন্য নিজেকে আত্মবলিদান দিয়েছিলে ? কেনো তুমি তার জন্মের পর তাকে মেরে দাও নি ? কেনো তুমি সেই নবজাতক শিশুর কচি ঠোঁটে তোমার স্তন গুঁজে দিয়েছিলে ? কেনো তুমি তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছিলে ? কি তার অপরাধ ?
আমি জানি জ্যেঠিমনি আমার এত প্রশ্নের উত্তর তুমি দিতে পারবে না। গলাটা বুজে এলো।
আমি মিত্রার অনুরোধে তোমার কাছে আসে নি। এসেছি নিজের মনের তাগিদে। এক মাতৃহারা স্ত্রীকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবো। ও জানে না আমি কোথায় এসেছি। কখন এসেছি। ওর মুখ থেকে সব কথা শোনার পর। মনটা ভীষণ ছটফট করছিলো। তোমার সঙ্গে দাখা করার জন্য। সুযোগ খুঁজছিলাম। কিছুতেই বাড়ির বাইরে আসতে পারছিলাম না। ছোটমার কথায় সুযোগ পেয়েগেলাম। ছোটমা বললো আজ কালরাত্রি আমাদের দু’জনকে এক ভিটেতে থাকতে নেই। সেই যা বেরিয়ে এসেছি।
জানো জ্যেঠিমনি আমি তোমার কাছে আসিনি, আমি এসেছি মিত্রার জন্মদাত্রী মায়ের কাছে, আমার মাকে আমি ছবিতে দেখেছি। জ্ঞানতঃ তার কথা মনে পরে না। যাক, সব যখন জেনেই ফেললাম তাই মেয়ের কাছে মাকে নিয়ে যেতে এসেছিলাম। মনে হয় এতো সৌভাগ্য মিত্রার কপালে নেই। তোমায় আজকে যা বলে ফেললাম, কথা দিচ্ছি এ কথা কেউ কোনোদিন জানতে পারবেনা। অনি যে এ বাড়িতে এসেছিলো তাও কেউ জানতে পারবে না। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।
কথা বলতে বলতে ফটোর দিক থেকে আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। চোখে হয়তো জল এসে গেছিলো। মানুষ এই জায়গাটায় ভীষণ দুর্বল। আবঝা দেখতে পেলাম গেটের কাছে ইসি আর বরুণদা। স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ওরা কখন এসেছে! আমিতো দরজা ভেজিয়ে দিয়েছিলাম ? জ্যেঠিমনি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে। চোখ ছল ছলে।
হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছে হন্তদন্ত হয়ে আমি গেটের কাছে এগিয়ে গেলাম।
তুই যাবি না। তুই এবাড়ি থেকে এভাবে যেতে পারিস না।
ইসির কথায় মাথা নত করলাম।
না ইসি। আমাকে যেতে হবে। ওরা আমার জন্য ভীষণ চিন্তা করছে। আমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকি। তার জন্য আমাকে শাস্তি দিস। আমি মাথা পেতে নেবো।
পিকু আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। পকেট থেকে একটা ক্যান্ডি বার করে ওর হাতে দিলাম।
নাও, এটা খেলে দাঁতে পোকা হবে না।
পিকু আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বরুণদা কেমনভাবে যেনো আমাকে দেখছে।
ওরা কিছুতেই গেট ছেড়ে সরে দাঁড়াচ্ছে না।
ইসি আমায় ছাড়, আমি যাই।
ইসি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। চোখে জল টল টল করছে।

বড়কি আমি অনির সঙ্গে ছুটকির কাছে যাবো। তোরা যাবি ?
জ্যেঠিমনির গম্ভীর কণ্ঠস্বরে ঘরটা গম গম করে উঠলো। বরুণদা চমকে তাকালো আমার দিকে। আমার কাঁধটা ধরে বার কয়েক ঝাঁকিয়ে দিলো।
ইসি ছুটে গিয়ে জ্যেঠিমনিকে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো।
আংকেল তুমি আমার মাকে বকলে কেনো।
পিকুর কথায় বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো। ওর বয়সে আমি আমার মা বাবাকে দেখি নি। একদিন ও বড়ো হবে। যদি এই স্মৃতিটুকু ওর মনে থেকে যায় সেদিন ও নিজের বোধ বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করবে, ওর আংকেল কতটা সত্যের দাসত্ব করে।
আমি পিকুকে কোলে তুলে নিলাম। সিঁড়িদিয়ে নিচে নেমে এলাম।


বাইরের গেটে তালা দিতে দিতে ইসি বললো, কিরে তোর গাড়ি কোথায় রেখেছিস।
হেসে ফেললাম।
হাসছিস যে।
আমার গাড়ি নেই। আমি বাসে চড়ি। প্রয়োজনে ট্যাক্সিতে।
তারমানে! কাগজের মালিক হয়েছিস, গাড়ি নেই। লোকে শুনলে কি বলবে।
আমি মালিক নই। মন থেকে আমি এখনো কর্মচারী। তোর বোন জোর করে আমার গলায় মালিকের মাদুলি ঝুলিয়ে দিয়েছে।
তোমায় একদিন অফিস থেকে এসে এই কথাটা বলেছিলাম ইসি, তোমার খেয়াল আছে। তুমি তখন বলেছিলে ছাড়োতে, বড়ো লোকেদের বড়ো বড়ো খেয়াল। আজ প্রমাণ পেলে।
সত্যি তোর গাড়ি নেই।
চলনা, এই টুকুতো, গলির মুখ থেকে ট্যাক্সি পেয়ে যাবো।
আমার একহাতে পিকু আর একহাত জ্যেঠিমনিকে ধরে রেখেছে। ওরা দুজনে সামনে। পিকু তরতর করে কথা বলে চলেছে। ওর অনেক প্রশ্ন। তার অর্ধক উত্তর আমার জানা অর্ধেক জানা নেই। ওর মহা আনন্দ, আংকেলের সঙ্গে মাসির বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে যাচ্ছে।
ইসিকে বললাম, কটা বাজে।
ইসি ঘড়ি দেখে বললো, দেড়টা বাজে।
মনে মনে বললাম সাড়ে ছ’ঘন্টা ধরে যুদ্ধ করে, অনি তুই জিতলি এটা মনে রাখিস।
তোর মাবাইল নেই ? ইসি জিজ্ঞাসা করলো।
আছে, পকেটে স্যুইচ অফ অবস্থায়।
খোল।
না। অসুবিধে আছে।
কিসের।
তুই বুঝবি না।
ইসি চুপ করে গেলো। গলির মুখে এসে একটা ট্যাক্সি ধরলাম। বললাম ট্র্যাংগুলার পার্ক। এককথায় রাজি হয়ে গেলো। আমি সামনে পিকুকে নিয়ে বসলাম। পেছনে ওরা তিনজন। আসার সময় পিকুকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে এলাম সব কিছু। ওরা তিনজনে পেছনে বসে আমার কথা শোনে আর হাসে।
মাঝে মাঝে ইসি বললো, তুইতো পিকুর সঙ্গে বেশ জমিয়ে গল্প করছিস। আমাদেরতো মাথা খারাপ হয়ে যায় ওর সঙ্গে বক বক করতে।
দুজনেই ক্যান্ডি মুখে দিয়েছি। চিবোচ্ছি।
বাড়ির গেটে যখন গাড়ি এসে দাঁড়ালো, তখন আড়াইটে বাজে। আমি ট্যাক্সির গেট খুলে প্রথমে নামলাম। দেখলাম আজ বাড়ির গেট খোলা। ভতরে অনেক লোকজন। চিকনা প্রথম আমাকে দেখতে পেয়েছে। ছুটে গেটের বাইরে চলে এলো। তারপর আমার সঙ্গে অপরিচিত লোক দেখে থমকে দাঁড়ালো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ও হাসলো। কোনো কথা বললো না। আমি জ্যাঠিমনিকে হাত ধরে আস্তে আস্তে নামালাম। গেটের মুখে আসতেই ছগনলাল বললো ছোটাবাবু বহুত গজব হো গায়া।
কেনো গো ছগনলাল।
তুমি সকাল থেকে নেই আছো।
হাসলাম।



দেখলাম মিত্রা তীরবেগে বারান্দা থেকে বাগানের পথে ছুটে আসছে। দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য। আমার একহাতে পিকু অন্য হাতে জ্যেঠিমনি। কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো। হাঁপিয়ে গেছে। ওর বুক ওঠা নামা করছে। চোখদুটো কেমন যেনো হয়ে গেলো। এক অব্যক্ত যন্ত্রণা ওর চোখে মুখে ফুটে উঠলো। না পাওয়ার বেদনার মধ্যে আনন্দ। চিকনা ছুটে ভেতরে চলে গেলো। একটা হৈ হৈ শব্দ ভেতর থেকে ভেসে এলো। বুঝলাম আমার আসার আগমন বর্তা পৌঁছোলো। মিত্রা জ্যেঠিমনিকে জড়িয়ে ধরে হাপুস নয়নে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ইসিতা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি স্থানুর মতে দাঁড়িয়ে। দেখতে পাচ্ছি সকলে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। কাকে বাদ দিয়ে কার কথা বলবো। বরুণদা অপ্রস্তুত।
বেশ কিছুক্ষণ পর জ্যাঠিমনি কথা বললো। চোখের দু কোল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।
কাঁদিস না। আমিতো এসেছি। অনি আমার সব রাগ যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে।
মিত্রা জ্যেঠিমনির বুকে মুখ ঘসছে।
সেই তুমি এলে, এতো দেরি করে এলে কেনো।
কোথায় দেরি করলাম। দেখ আমি ঠিক সময়ে এসে পরেছি। আজ আনন্দের দিন, তুই কাঁদিস না। ওই ছেলেটার দিকে একবার তাকা। জানিস না ও সকাল থেকে কতো লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করেছে।
আংকেল চলো নেমন্তন্ন খাই।
মিত্রা জ্যেঠিমনির বুক থেকে মুখ তুললো। আমার দিকে তাকিয়ে একবার হেসে ফেললো। এ হাসি লাখ টাকা দিলেও পাওয়া যায় না। মিত্রা পিকুর গাল টিপে দিলো।
কোথায় নেমন্তন্ন খেতে যাবে।
মাসির বিয়ে না। গাল থেকে মিত্রার হাতটা সরিয়ে দিলো।
সবাই ঘিরে ধরেছে। আমার দিকে কেমন ভাবে যেনো তাকাচ্ছে। বড়মা এগিয়ে এলো। চোখা চুখি হলো জ্যেঠিমনির সঙ্গে। বুঝতে পারলাম দুজনে দুজনকে কোথায় যেনো দেখছে চিনি চিনি করেও চিনতে পারছে না। বত্রিশ বছর আগের একরাতে কয়েক ঝলকের দেখা। স্মৃতি ফিকে হয়ে গেছে। তবু ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।
জ্যেঠিমনি, বড়মা। বড়মা উনি মিত্রার জ্যেঠিমনি।
দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলো।
ভাবগম্ভীর পরিবেশ।
আমি সবার সঙ্গে একে একে আলাপ করিয়ে দিলাম। দাদা ডাক্তারদাদা মল্লিকদা কাউকে দেখতে পেলাম না। ছোটমা সন্দেহের চোখে আমাকে দেখছে। অনি মিত্রার জ্যেঠিমনিকে কোথা থেকে ধরে আনলো। এর গল্পতো আগে কখনো শুনি নি। ছোটমার চোখ তাই বলছে। আমি এমন ভাবে হাসলাম, যেনো কেমন দিলাম এক্সক্লুসিভ নিউজ।
ছোটমা হেসে চেখের ইশারায় আমার গালে থাপ্পর মারলো।
ভেতরে এলাম। ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বারান্দায় আমার ঘরের সামনে আমার বন্ধুরা। সবাই আমাকে মাপছে। ভেতরে এসে দেখলাম দাদারা বসে। কাকা উনা মাস্টারও আছে। আমি সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম জ্যেঠিমনি ইসিতা আর বরুণদার সঙ্গে। ওরা প্রথমে একটু অবাক হলো। চোখ দেখে বুঝতে পারলাম। পিকু বলে উঠলো।
আংকেল আমরা কোথায় নেমন্তন্ন খেতে বসবো। মাসিকে দেখাও।
ঘর ভর্তি সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ইসিতা আমার হাত থেকে পিকুকে নিয়ে মিত্রার কোলে তুলে দিলো।
এইযে তোর মাসি। নে। হয়েছে মাসিকে দেখার সখ।
সবাই পিকুর গাল টেপে। ও হাত সড়িয়ে দেয়। বক বক করছে।
তাহলে এডিটর, কথাটা তাহলে সত্যি।
কি।
যার বিয়ে তার হুঁস নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই।
ডাক্তারদাদার কথায় জ্যেঠিমনি পর্যন্ত হেসে ফেললো। আস্তে করে বললো।

ওর দোষ নেই। ও সকাল থেকে অনেক যুদ্ধ করেছে।
কি অনিবাবু মনে হচ্ছে যুদ্ধটা তাৎক্ষণিক সময়ের মধ্যে মাথায় এসেছিলো। দেখলে তো তোমার মাথা তোমায় কেমন বিট্রে করলো।
তোমরাই বা কেমন বাপু এক কথায় চলে এলেই হতো। তাহলে ওকে যুদ্ধ করতে হতো না। বড়মা বললো।
আমি পায়ে পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। আমে দুধে মিশে গেছে, আমি আঁটি এবার গড়াগড়ি খাবো। চিকনা আমার পেছন পেছন। বাসু অনাদিকে দেখলাম শিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে মুচকি হাসলো। আমি ওপরে উঠে এলাম। দেখলাম কনিষ্ক বটা নীরু।
কিরে আর সব কোথায়।
তোর বিয়ে বলে কি হাসপাতাল বন্ধ থাকবে।
হাসলাম।
ঘরে এলাম।
মনে হচ্ছে একটা এক্সক্লুসিভ মারলি। কনিষ্ক বললো।
হাসলাম।
একটা সিগারেট দে।
চিকনা তোমার গুরুকে একটা সিগারেট দাও।
চিকনা হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো।
খুব জমিয়ে নিয়েছিস বলে মনে হচ্ছে।
বুঝলি অনি, চিকনা হচ্ছে ফ্রেস অক্সিজেন। নিলে হার্টের জোড় বারে।
কিরে চিকনা কনিষ্ক কি বলে।
কনিষ্কদা বাড়িয়ে বলছে।
চিকনা সিগারেট বার করে সবাইকে দিলো। আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
হাসলি যে।
তোর কাউন্টার আমার।
সঞ্জু কোথায় রে।
নিচে। ইসলামদার সঙ্গে কাজ করছে।
তুই।
আমি হাওয়া খাচ্ছি।
মিনতিকে দেখতে পেলাম না।
এতো ভিড়ে দেখবি কি করে।
সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিস।
কাছে এলে তো।
কনিষ্ক।
বল।
কাকাকে দেখলি।
দেখলাম। তার থেকেও বড়ো সরেশ জিনিষ তোর উনা মাস্টার।
হেসে ফেললাম।
চিকনা একটু চা হবে।
দাঁড়া, বলে চিকনা হন হন করে হেঁটে চলে গেলো।

তোদের খাওয়া হয়েছে।
তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
কিরে নীরু।
দাঁড়া তোকে একবার ভালোকরে দেখি।
কেনো।
গেট পেরিয়ে বাগানের লনে, দেখেই ম্যাডামের হান্ড্রেড মিটার স্প্রিন্ট। একেবারে প্রথম স্থান। অলিম্পিকে সোনা জিতেছে। তারপরেই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়া। তুই.....।
বটা ঝেড়ে একটা লাথি কষালো নীরুরু পেছন দিকে।
তুই মারলি কেনো।
তোর কমেন্ট্রি শুনে।
সবাই হো হো করে হাসছে।
অনি ব্যাপারটা তোলা রইলো মনে রাখিস।
অনাদির দিকে তাকালাম।
কখন এলি।
আটটা।
বাড়ি থেকে কখন বেরিয়েছিস।
সাড়ে চারটে।
ওখানে কাকে রেখে এলি।
তোর এতো চিন্তা কিসের। কনিষ্ক খেঁকিয়ে উঠলো।
তুই গিয়ে পাহাড়া দিবি।
অনাদি হাসছে।
বলুনতো ওকে।
মিলি গেটের মুখে এসে দাঁড়ালো। আমাকে দেখে ফিক করে হেসে বললো। তোমার সঙ্গে পরে একচোট হবে। কনিষ্কদা ছোটমা সবাইকে নিচে খেতে ডাকছে।
কনিষ্ক আমর দিকে তাকালো।
সকাল থেকে কিছু পেটে পরেছে।
না।
খালি পেটে লড়ে গেলি।
হ্যাঁ।
এসেই দেখলাম তুই নেই। বড়মার মুখ হাঁড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাইকে চাঙ্গা করলাম। ছোটমার মুখ থেকে সব শুনলাম। বুঝলাম নিশ্চই কারুর সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গেছিস। জিজ্ঞাসা করিস বড়মাকে, আমি এই কথা বলেছি কিনা।
ঠিক বলেছিস কনিষ্ক, এই বোঝাপড়াটা আমার জীবনের একটা মাইলস্টোন।
জানি আবহাওয়া তাই বলছিলো। ম্যাডামের এ্যাকসন রিয়াকসনে তার প্রতিফলন ঘটলো।
আর কথা নয় এবার চলো। মিলি বললো।
ওরা নিচে চলে গেলো।
বাসু বললো, তুই আবার কোথাও বেরোবি নাতো।
না।
ওরা চলে গেলো। আমি টেবিলের কাছে গেলাম। মোবাইলটা পকেট থেকে বার করলাম। স্যুইচ অফ। নিজে থেকেই জিভ বার করলাম। মোবাইলটা অন করলাম। দেখলাম পঞ্চাশটা মিস কল। আর দেখার ইচ্ছে হলো না। সবাই একবার করে টিপেছে। মনে হচ্ছে কেউ বাদ যায় নি। মনটা হাল্কা, কিন্তু মনে হচ্ছে যেনো এখনো পাথর চাপা। আর একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। টেবিলের ওপর পরে থাকা প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমগাছে ছোটো ছোটো আম ধরেছে। এখন আর আমের বোল একটাও নেই। গাছের ডালে আলো লাগানো হয়েছে। ওপর থেকে নিচের দিকে তাকালাম। সারাবাগানে ছোট ছোট ছাতা লাগানো হয়েছে। এক একটা ছাতার তলায় দুটো করে চেয়ার। মনে হয় ইসলামভাই বুফে সিস্টেমে খাওয়াবে।
এইনে, ধর।
পেছন ফিরে তাকালাম।
চিকনা চায়ের কাপ হাতে।
নিজে বানালাম। খেয়ে গালাগালি করবি না। সিগারেটটা দে। দুটান মেরে নিবিয়ে দিই, পরে খাবো।
কেনো।
সবাই ছোটমার ঘরে ঢুকেছে, এবার তোর ঘরে আসবে, আমি কেটে পরি।
হাসলাম।
চিকনা এই কদিনে কতো বোঝদার হয়ে গেছে। ভাবতেই ভালো লাগছে।
জানলার সামনে দাঁড়িয়েই চা খাচ্ছিলাম। আবার ভাব সাগরে ডুবে গেলাম। মানুষের জীবন নদীর মতো কোথা দিয়ে যে বইবে কেউ জানে না। উপন্যাসে বহু চরিত্র পরেছি। আমার জীবনটাই যেনো একটা উপন্যাস হয়ে যাচ্ছে। যতো ভেতরে ঢোকো তত রস।
কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোথায় ডুব মারলি। ছোটমার গলা।
ও বুঝি মাঝে মাঝেই এরকম ডুব মারে। জ্যেঠিমনি বললো।
ফিরে তাকালাম।
গেটের মুখে সবাই। বড়মা ছোটমা জ্যেঠিমনি বৌদি মিত্রা ইসিতা।
দিদি এইটা ছোটবাবুর ঘর। আগে মাসের পর মাস বন্ধ থাকতো, মিত্রা আসার পর থেকে মাসের মধ্যে কুড়িদন বন্ধ থাকে বাকি দশদিন খোলা হয়।
আমি তাকালাম। ছোটমার মুখে বাঁকা হাঁসি। মিত্রার দিকে তাকালাম। ওর ডাগর নবীন চোখে জয় করার হাসি। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ নীচু করলো। ভাবতেই পারে নি অনি এইরকম একটা কাজ করতে পারে।

কিরে সকলকে প্রসাদ দিয়েছিস। জ্যেঠিমনি কিন্তু আমার হাত থেকে নেয়নি।
জ্যেঠিমনি আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমি জ্যেঠিমনির থেকে লম্বা।
তুই আমার সব বাঁধ ভেঙে দিলি আজকে।
কই পারলাম, চেষ্টা করলাম মাত্র। সফল হই আগে।
এখনো তোর সন্দেহ আছে।
সন্দেহ না, এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।
সে তুই তোর মতো করিস।
এইবার ঠিক কথা বলেছো।
কেনো।
এতোক্ষণ তুমি আমাকে সম্মান দিচ্ছিলে, তুমি সম্বোধন করছিলে। যতই হোক আমিতো মিত্রা নই। সম্মান পেতেই পারি। চ্যাটুজ্জে বাড়ির জামাই বলে কথা।
দেবো কান মূলে, আবার বড়ো বড়ো কথা। ছোটমা বললো।
ইসিতা ফিক করে হেসে ফেললো।
ও ছোট আজ থাক, ওর বৌভাত। সখ করে বিয়ে করলো। বৌদি বললো।
বড়মা হেসেও হাসে না।
হ্যাঁরে তোর আবার ধর্মে মতি গতি কবে থেকে হলো।
কেনো।
তুই নাকি ঠনঠনেতে গেছিলি।
হ্যাঁ।
কেনো।
মানতে করেছিলাম।
কিসের।
মিত্রাকে বিয়ে করলে পূজো দেবো।
ও হরি দেখেছো ছেলের কান্ড।
ছোটমার কথায় সবাই হাসে।
তুই কবে মানত করেছিলি শুনি।
সে তুমি বুঝবে না।
বোঝার আর কি বাকি রেখেছিস শুনি।
ছোটমার কটকটে কথায় ইসিতা হেসে গড়িয়ে পরে। জ্যেঠিমনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
তুইকি আজ সারাদিন এই জামাকাপর পড়ে কাটাবি ঠিক করেছিস। বৌদি বললো।
চসসোর কোথাকার। ছোটমা বললো।
আমি হাসছি।
বড়মার কাছে এগিয়ে গেলাম। খালি শুনলে হবে, কিছু বলো।
দাঁড়াবাপু সকাল থেক বড়ো জ্বালিয়েছিস।
নির্জলা।

তাহলে কি মন্ডা মিঠাই খাবে। ছোটমা ছেঁচকিয়ে উঠলো।
ইসিতার দিকে তাকালাম।
কি ইসি ছুটকির বাড়িতে তোমাদের নিয়ে এসে অন্যায় করেছি।
ইসিতা মাথা নীচু করলো। বুঝলাম চোখ ছল ছল করে উঠেছে।
ছুটকি আবার কার নাম রে। ছোটমা বললো।
আমি হাসছি।
জ্যেঠিমনি হেসে ফেললো। ছোটোবেলায় ওদের দুজনকে বড়কি আর ছুটকি বলে ডাকতাম।
ছোটমা চোখ বড়ো বড়ো করে, কিরে মিত্রা আগে বলিসনিতো কখনো।
ছোটমার কথার ধরণে ইসিতা কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেললো।
দুবোন দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে।
এখন আর তোর কি কি বাকি আছে।
কিসের।
বুঝতে পারছিস না।
একটুও না।
বোঝাচ্ছি। আপনি ও ভাবে তাকাবেন না দিদি, ওর কীর্তি কলাপ শুনলে আপনার গা হিম হয়ে যাবে। ওর সঙ্গে কাল যদি কেউ না থাকতো, তাহলে আমরা কেউ জানতেও পারতাম না ও কোথায় গেছে। এবার বুঝুন।
জ্যেঠিমনি হাসছে।
আধ ঘন্টার মধ্যে রেডি হবি। ওদের খাওয়া হলে খেতে বসবো। আর একটা কথা নিজের পছন্দ মতো জামা কাপর পরা চলবে না।
আমি হাসছি।
ছোটমার শাসনে ওরাও হাসে।
ওরা সবাই চলে গেলো।
আমি দরজাটা ভেজিয়ে জামা প্যান্ট খুলে টাওয়েলটা কাঁধে চাপিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। ভালো করে স্নান করলাম। দেহের সমস্ত ময়লা যেনো ধোয়া হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম সত্যি আমার জীবনটা যেন কি রকম। নিজের কাচে নিজে যে কিছু প্রত্যাশা করবো তার কোনো উপায় নেই।
বাথরুম থেকে বেরোতেই দেখলাম দুই বোন খাটে বসে বসে কথা বলছে।
আমি আবার ভেতরে ঢুকে গেলাম।
উঃ লজ্জাশীলা নারী। ইসিতা বললো।
আয় চলে আয় আর লজ্জা পেতে হবে না।
গেট থেকে মুখ বার করে হাসলাম।
মিত্রা মুখ টিপে হাসছে।
তোর কীর্তি কলাপ শুনছিলাম ওর মুখ থেকে।
দে দে তাড়াতাড়ি গেঞ্জিটা দে শরীর ঢাকি।
একিরে তুই বিয়ে করা বৌকে কি বলে সম্বোধন করলি।
তুই বুঝবি না। দারুণ মজা।
দাঁড়া আমি মাকে গিয়ে বলছি।
শোধরাতে পারবি না।
আমি গেঞ্জিটা পরলাম। জাঙ্গিয়াটা পরতে গিয়ে ওদের দিকে তাকালাম।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
আমরা কেউ দেখবো না।
আমার আপত্তি নেই ভয় না পেলেই হলো।
কি শয়তান রে, শালি বসে আছে। দেখে পর কারটা পরছিস। ইসিতা চোখ পাকিয়ে বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

গল্প হয়ে গেছে ?
মিত্রা হাসছে। সদ্য কালকের ঘটনা, না বলে পারি।
বেশ বেশ। মাথায় রাখিস, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় শোধ করে দেবো।
রেডি হলাম। আজও নতুন পাজামা পাঞ্জাবী। বেশ লাগছে। ঘন ঘন নতুন নতুন পোষাক।
এটা কার স্পনসর।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
জ্যেঠিমনি।
তারমানে!
এটা অনেক দিন আগে কেনা হয়েছিলো। মানুষটা তৈরি হয়নি, তাই ভাঙা হয় নি।
সেই জন্য ন্যাপথালিনের গন্ধ।
কি ইসিতা ম্যাডাম।
ইসি খাট থেকে উঠে এলো। আমি পাঞ্জাবীর বোতাম লাগাচ্ছিলাম। ইসি আমার হাত সড়িয়ে পাঞ্জাবীর বোতাম লাগাতে লাগাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফললো।
কি হলো ম্যাডাম। এটা ঠিক নয়। অনি অনির কাজ করেছে।
মিত্রা উঠে এলো।
এই দিদি কাঁদিস না।
তোকে আমি সকালে অনেক নোংরা কথা বলেছি।
ওটাতো আমার প্রাপ্য ছিলো ইসি। নাহলে তোদের নিয়ে আসতে পারতাম না।
তুই আগে কেনো বললি না।
তুই সেই পরিবেশ দিস নি। আমি সাড়েছ’ঘন্টা তোদের বাড়িতে ছিলাম। তাগিদ আমার, আমাকে পরিবেশ রচনা করতে হলো। আমার মনে হয় তুই পুরো শুনিসও নি।
ইসি মাথা নাড়ছে।
আমি অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি, বর্তমান আর ভবিষ্যতকে নিয়ে চলি। এবার ছাড়া, নাহলে এখানে সেখানে হাত দিয়ে ফেলবো। ভাববো মিত্রা জড়িয়ে ধরেছে। সকাল থেকে কিছু খাওয়াস নি। খালি গাল দিয়েছিস মনে মনে।
ইসি কোমরে একটা চিমটি কাটলো।
মিত্রা হাসছে।
ইসি হাসতে হাসতে চোখ মুছলো।
টাওয়েলটা দিয়ে মুখটা মুছে নে।
মিত্রা চিরুণি এগিয়ে দিলো। চুল আঁচড়ালাম। চুলে চিরুনি চলে না। এবার সময় করে কাটতে হবে।
তিনজনে নিচে নেমে এলাম। খুব হৈ হৈ হচ্ছে। পিকু বাবুকে দেখলাম কনিষ্কদের টেবিলের সামনে। বটা চেঁচিয়ে উঠলো। অনি এসে গেছে এবার ঝেড়ে দে।
কেনো, না বললে পেটের ভাত হজম হচ্ছে না। নীরু দাঁতে দাঁত চেপে চেঁচিয়ে উঠলো।
তখন থেকে তোরা খেওখেয়ি করছিস, কি হয়েছে বলতো। ছোটমা বললো।
দাঁড়িয়ে যাও, এবার নীরুর আর একটা পর্দা ফাঁস। বটা বললো।
কনিষ্ক হাসছে।
ইসিতা মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
এগুলোর সঙ্গে ইসিতার আলাপ করিয়ে দিয়েছিস।
হ্যাঁ।
আমি কিন্তু খেতে খেতে উঠে যাবো ছোটমা। নীরু চেঁচাচ্ছে সকলে হাসছে।
কেনো তোরা ওর পেছনে লাগছিস বলতো। ছোটমা আবার বললো।
তাহলে একটা এক্সক্লুসিভ মিস করবে।
ছোটমা কনিষ্কর দিকে তাকাচ্ছে। মিটি মিটি হাসছে।
আচ্ছা বড় ম্যাডাম।
কনিষ্ক ইসিতার দিকে তাকালো।
না বলছি, একবারে বলবি না। নীরু আবার চেঁচিয়ে উঠলো।
নীরুর কথায় সকলে হাসছে।

তাহলে অনির প্রোগ্রাম ক্যানসেল। কনিষ্ক বললো।
নীরু চুপ করে গেলো।
কিরে বলবি তো অনির প্রোগ্রাম ক্যানসেল, না তোরটা বলবো।
অনির প্রগ্রাম হবেতো ? নীরু লজ্জা লজ্জা ভাবে বললো।
আমি কথা দিচ্ছি, হবে।
কিরে তোরা কি শয়তান, অনির নাম করে......। ছোটমা বললো।
ছোটমা তুমি সাক্ষী রইলে। নীরু বললো।
কনিষ্ক হাসছে। আমিও হাসছি।
ব্যাপারটা কি রে ? আমি বললাম।
মিত্রা আমার হাতটা ধরেছে। টিনারা তাকিয়ে কনিষ্কর দিকে। ফিক ফিক করে হাসছে।
আঙ্কেল মিষ্টিটা দাও। পিকু বলে উঠলো।
ইসি হো হো করে হেসে ফেললো।
দাঁড়া ব্যাটা দিচ্ছি।
কিরে তোকে....! আমি বললাম।
আর বলিস না। প্রথমে নীরুকে ঝামেলা করছিলো, তারপর আমার কাছে চলে এসেছে। ম্যাডাম আপনি একটু এদিকে আসুন।
কনিষ্ক ইসির দিকে তাকিয়ে বললো।
ইসি এগিয়ে গেলো।
মিত্রা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো। নীরুর অবস্থা খারাপ। তাকিয়ে দেখ।
কেনো রে।
আপনি ওই ভদ্রলোককে চিন্তে পারছেন। কনিষ্ক নীরুকে দেখিয়ে বললো।
আমি ব্যাপারটা ধরতে পেরে গেলাম।
হো হো করে হেসে ফেলেছি।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। ঘরের মধ্যে আমি একাই হাসছি।
তুই একেবারে আমাকে চাটবি না।
নীরু আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে বললো।
তার মানে! মিত্রা আমার হাত ধরে। চোখে জিজ্ঞাসা।
দেখেছিস সমঝদারকে লিয়ে ইশারা ভি কাফি। কনিষ্ক বললো।
ইসি আমার দিকে তাকিয়ে।
কিরে অনি।
তুই নীরুকে চিন্তে পারছিস না।
না।
বছর পাঁচেক আগে দেখেছিস। কচি কচি দেখতে ছিলো তখন, সেই জন্য চিন্তে পারছিস না।
নীরুর দিকে তাকালাম।
কিরে নার্সিংহোম না হাসপাতাল ?
মিত্রা আমার হাতটা ধরে খিল খিল করে হেসে আমার গায়ে ঢলে পরলো।
দেখলি, দেখলি কনিষ্ক, এবার অনি মালটা রসিয়ে রসিয়ে ঝারবে।
মিত্রা ইসির কানে কানে ফিস ফিস করছে।
ইসি হো হো করে হেসে উঠলো।
তুই সব গজব করে দিলি। নীরু গজ গজ করছে।
কনিষ্ক বটা হো হো করে হাসছে।
সোনাবাবা, রসোগোল্লা খাওয়া হয়েছে। কনিষ্ক পিকুকে বললো।
আরো জরে সবাই হেসে ফেললো।
মিত্রার কাছ থেকে এবার সবার কাছে সংবাদটা পৌঁছে গেছে।
তখন ও আরো রোগা ছিলো। হাসতে হাসতে ইসি বললো।
কেনো মোটা হলে ভালো লাগতো। আমি বললাম।
দেখবি রে শয়তান। ইসি এগিয়ে এলো আমার কাছে।
নীরু এটা তোর কতো নম্বর।
নীরু লজ্জা পেয়ে গেছে।
পার্সোনালি তিন নম্বর।
খবরটা ঘর ময় রাষ্ট্র হয়ে গেছে। সবাই হাসছে।

বরুণদা খেতে খেতে নীরুর কাছে উঠে গেলো।
সত্যি নীরুবাবু সেদিন আপনি না থাকলে, আমি ইসি আর পিকুকে ফিরে পেতাম না।
বরুণদা একেবারে গদোগদো।
আমি ঘরথেকে বেরিয়ে গেলাম। যাওয়ার সময় নীরুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ওপরে চল কিমা বানাবো।
কনিষ্ক, আমার কিছু হলে তুই দায়ী থাকবি, মাথায় রাখিস।
সকলে নীরুর কথায় হাসা হাসি করছে।
ঘর থেকে বারান্দায় এলাম। চারিদিকে লোকজন। দাদাদের দেখলাম লনে একটা ছাতার তলায় বসে গল্প করছে। সঙ্গে উনা মাস্টার, কাকা, ডাক্তারদাদা। পায়ে পায়ে পেছন দিকে গেলাম। দেখলাম ইসলামভাই রান্নার লোকেদের সঙ্গে কথা বলছে। কাছে যেতে বললো, কিরে খাওয়া হয়েছে।
না।
আর কখন খাবি, তিনটে বেজে গেলো।
এবার বসবো। তুমি খেয়েছো ?
হ্যাঁ। বড়দি জোরকরে খাইয়ে দিয়েছে। তুইতো আজকে আর একটা দিদিকে এনে হাজির করলি। এটাই তোর সকাল থেকে উঠে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো।
হাসলাম। হ্যাঁ।
সেই জন্য সকাল থেকে উঠে দৌড়ে ছিলি।
হ্যাঁ। তোমায় কেউ কিছু বলে নিতো ?
শুরু করেছিলো, ডাক্তারদাদা ধমক মারলো। সবাই থেমে গেলো। নাহলে পিন্ডি একেবারে চটকে দিতো।
আমি হাসছি।
হাসিস না। তুই কেশ করবি আমাকে তার ঝাল পোহাতে হয়। এই খবরটা কি পর্শু সারারাত কালেকসন করেছিস ?
তোমায় কে বললো।
তুই সারারাত জাগলি, এমনি এমনি, তা হয় ?
হো হো করে হেসেফেললাম।
সেই জন্য কালকে তোকে বাধা দিই নি। না হলে জেগে বসে থাকতাম। তোর কালকের মুখ আর এ্যাকসনের দিনের মুখের মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিলো।
বাবা তুমিও দেখছি এখন মুখ দেখে বিচার করতে শিখে গেছো।
আগে একটু একটু জানতাম তোর পাল্লায় পরে এখন পুরো জেনে ফেলতে হচ্ছে।
হ্যাঁগো সাগির অবতার কবিতা লক্ষ্মীকে দেখতে পাচ্ছিনা।
কবাতা ভেতরে কোথাও আছে। ওরা তিনজনে আর একটু পরে আসবে।
রতন আবিদ।
সকাল থেকে ছিলো। একবার বললো একবার খোঁজ খবর নেবো অনিদার।
নিতে বলতে পারতে।
ওরা খোঁজ নিলেও তোকে পেতো না।
আমি হাসছি।
ইসলামভাই আমার পেটে একটা খোঁচা মারলো। তুই এখন ওয়েস্ট বেঙ্গলের ডন।
তাহলে ইসলামভাই কি।
অনির চেলা।
মাথায় রাখবো।
ওই দেখ, তোকে মামনি ডাকছে।
পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম মিত্রা ইসলামভাইকে ইশারা করছে আমাকে পাঠাবার জন্য।
যাই, তুমি কাজ শেষ করো।
আমি এগিয়ে এলাম। মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। কাছে আসতে বললো।
এক থাপ্পর।
আবার কি করলাম।
মাথায় খালি ফিচলে বুদ্ধি।
আমি হাসছি। 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks