দেখি নাই ফিরে - (Part-83)

পিকু নীরুর হাতে ডেলিভারি তুই বুঝলি কি করে।
কনিষ্কর কথার ভাঁজে। দেখলি না নীরু কিরকম লজ্জা পাচ্ছিলো। শালা ওপরে চলুক ওকে দেখাচ্ছি।
কেনো ও কি অন্যায় করলো।
ও তুই বুঝবি না।
তোকে এমন দেবো না। আমি কিছু বুঝি না, না।
তাহলে জিজ্ঞাসা করছিস কেনো। ওটা মেয়েদের ব্যাপার নয়, ছেলেদের।
এখনো আশ মিটছে না।
মেটে, তুই বল। নীরুর চোখ দিয়ে দেখা হয়ে যাবে।
দাঁড়া আমি দিদিভাইকে বলছি।
বলিসনা, কোথায় কি হয়ে যাবে।
তোকে একবারে খেয়ে ফেলবো।
বাকি কি রেখেছিস।
পায়ে পায়ে চলে এলাম, ঘরে ঢুকতেই দেখলাম কনিষ্ক বটা কোমরে টাওয়েল জড়িয়েছে।
কিরে টাওয়েল পরেছিস ?
তোদের খাইয়ে দিই। না হলে দেরি হয়ে যাবে।
বড়মা পারমিশন দিয়েছে।
দেয়নি, জোগাড় কেরে নিলাম। মাসি একটু ঝামেলা করছিলো। নীরু ধমক দিলো।
নীরু ধমক দিলো!
ওরে দেখনা রান্না ঘরে কি করছে, একবার উঁকি মেরে।
দখি টিনা মিলি অদিতি সকলে লেগে পরেছে। মৈনাক দেবা পাতা পাতছে।
তাড়া তাড়ি খা। একটা ছোটো প্রোগ্রাম আছে।
সেটা আবার কিসের রে ?
দেখতে পাবি।
তোরা মনেহচ্ছে কিছু ঘোটালা পাকাচ্ছিস।
দেবা হাসছে।
আমরা সবাই একসঙ্গে বসলাম। আজ দেখছি কয়েকটা এক্সট্রা টেবিল ঘরে ঢুকেছে। সবাই এক সঙ্গে বসলাম। খাওয়া শুরু করলাম। সুরো এসে পাতের সামনে দাঁড়ালো। মিটি মিটি হাসছে।
কিরে। তোর আবার কি হলো।
আমার পাতের দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে।
তোমার একটা ঠ্যাং দাও।
আমার ঠ্যাং!
ওই হোলো, মুরগীর।
ওকিরে এখুনি একপেট খেলি। বৌদি চেঁচিয়ে উঠলো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
কনিষ্কদা বৌদির জন্য আর একটা দিচ্ছে, তুমি ওটা দাও না। সুরো হাসছে।
আমি সুরোর মুখে তুলে দিলাম। সুরে নাচতে নাচতে চলে গেলো। ইসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ফিক ফিক করে হাসছে।
নীপা একটা বাটি নিয়ে এগিয়ে এলো।
একবারে ওকে দিবি না। আদর না। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি ঠিক বুঝে ওঠার আগেই বড়মা বলে উঠলো।

ওরকম করিস না। ওর জন্য কতোদূর থেকে বয়ে এনেছে সুরো বল।
আমি হাসছি, মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
একবারে তাকাবি না, চোখ গেলে দেবো। তোর জন্য সুরোমাসি চিংড়িমাছের মোলা আর টক নিয়ে এসেছে। এতো খেয়েও আস মিটছে না।
আমি হাসছি।
কনিষ্ক। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
কি হলো ম্যাডাম।
কনিষ্ক সামনে এসে দাঁড়ালো।
নীপার হাত থেকে বাটিটা নাও।
কেনো!
নাওনা, আমি বলছি।
নীপা হাসছে।
সুরোমাসি এগিয়ে এলো।
ও মিত্রা যেটুকু আছে আমি সবাইকে ভাগ করে দিচ্ছি।
আগে দাও, তারপর ওর বাটি বসবে। কতো খায়। মিত্রা মুখ ভেঙচে বললো।
জ্যেঠিমনি এতোক্ষণ শুনছিলো কিছু বুঝতে পারছিলো না। এইবার হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই কি সব সময় ওর সঙ্গে এরকম করিস।
তুমি জানো না ও কিরকম তেঁদড়। সুরোমাসি কারুর জন্য নিয়ে আসে নি। খালি বুবুনের জন্য নিয়ে এসেছে।
তুইতো তখন খেলি। ছোটমা হাসতে হাসতে বললো।
ওতো একটু খানি টেস্ট করেছি।
অতোটা খালি। ওটা টেস্ট!
ছোটমার কথাকে পাত্তাই দিলো না মিত্রা।
কনিষ্ক তুমিতো পাওনি। একটু টেস্ট করো।
সুরোমাসি মাটির খাবরি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এলো। সবাইকে একটু একটু দিলো।
কনিষ্ক মুখে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। মার্ভেলাস, কি টেস্টরে অনি।
নীরু বটা রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো।
হাগুড়ে। কনিষ্ক গম্ভীর হয়ে বললো।
তুই খেলে দোষ নেই, আমি খেলেই হাগুড়ে।
জ্যেঠিমনি একবার মুখে দিয়ে দেখো। মিত্রা বললো।
এটা অনিদা স্পেশাল। মিলি বললো।
ওখানে গেলে এই দিয়ে এক জাম পান্তা খায়। মিত্রা বললো।
তুই খাস না। ছোটমা বললো।
আমার বাটি টেবিলে রাখা মাত্র বটা নীরু মিলি টিনা অদিতি দেবা মৈনাক সবাই হাত মারলো। আমি হাসছি।
কিরে তোরা সবাই খেয়ে নিলে ও খাবে কি।
আঃ বৌদি থাকনা, আমি অনেক খেয়েছি।
আ-মোলো ধর্মাবতার যুধিষ্টির। বড়মা এমন ভাবে বললো হাসির ঢেউ উঠলো।

বড়মা আমরা খেলেই অনির খাওয়া হয়ে যাবে। কনিষ্ক বললো।
ইসি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ব্যাপারটা এরকম তুই পারিস বটে। তোকে যতো দেখছি তত অবাক হচ্ছি।
ওরা তিনজনে একদিকে। তারপাশে বৌদি। আমি বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি।
তুই কি মেয়ে এতো টক খাস। ইসি বললো।
এতে তবু পোঁয়াজ কুঁচি, কাঁচা লঙ্কা, কাঁচা সরষের তেল পরে নি। পরলে দেখতিস। টকাস করে জিভ দিয়ে আওয়াজ করলো মিত্রা।
হো হো হো সবাই হাসছে।
নীরু এগিয়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
তোর আবার কি হলো।
বটা ঝেড়ে দেতো নীরুকে একটা। কনিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো।
দাঁড়ানা, এই মালটা খাওয়ার জন্য ওর ওখানে যেতে হবে না।
তোর চেম্বার ?
রাখ তোর চেম্বার।
সবাই হাসছে।
ও নীরু ওকে ছাড় বেচেরা সকাল থেকে কিছু খায় নি। বৌদি বললো।
ও করপোরেশনের প্রচুর জল টেনেছে। ওই জন্য খিদে পায় না।
নীরুর কথা বলার ঢঙে সবাই হাসছে।
বড়মা।
কিরে।
নীরু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বড়মার পাতে।
নীরু চোখ গেলে দেবো। একবারে তাকাবে না। মিত্রা চেঁচালো।
নীরু মিটি মিটি হাসে।
দেবো। একটু অপেক্ষা কর। বড়মা বললো।
এতো খেয়ো না সোনা। অনেক রাত পর্যন্ত টানতে হবে। কনিষ্ক নীরুর পিঠে হাত দিয়ে বললো।
বটা সত্যি সত্যি এগিয়ে এলো।
বড়মা এটা ঠিক হচ্ছে না। তুমি বটাকে কিছু বলো। এতো অত্যাচার সহ্য করা যায়। নীরু বললো।
তুই তুলবি, আমি খাবো। বটা বললো।
তার মানে! হাঁস ডিম পারবে খাবে দারোগা।
এবার হাসি আরো জোরে। জ্যেঠিমনি খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে। হো হো করে হাসছে।
দিদি খাওয়া থামিয়ে লাভ নেই এটা নিত্যকার ব্যাপার। ছোটমা বললো।
বুঝতে পারছি তোমাদের দু’জনের খুব কষ্ট। জ্যেঠিমনি হাসতে হাসতে বললো।
কষ্ট মানে, মাঝে মাঝে এদের জ্বালায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ছোটমা বললো।
মিত্রা নিজের পাত ছেড়ে উঠে এসে আমার পেছনে দাঁড়ালো। বড়মা একবার আমার দিকে তাকালো। ইসারা করলো কিরে ?
আমি হেসে ইশারায় বললাম। যেটুকু চিংড়ি মাছের মোলা পরে আছে নেবে।
বড়মা হেসে ফেললো।

কিরে কি নালিশ করছিস বড়মাকে। মিত্রা কট কট করে বললো।
কিছু না।
আমি দেখলাম তুই বড়মাকে ইশারা করছিস।
আমি ওর দিকে তাকালাম। তুই বাটিটা নিবি, আমার ভালো লাগছে না খেতে।
কি ভালোরে তুই। আমার গালটা টিপে মিত্রা বাটিটা তুলে নিলো।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।
বুঝলি মিত্রা।
বলো।
অনি ইশারা করে এই কথাটা বলছিলো।
ও বলুক।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, দেখলাম বটা নীরু কনিষ্ক মিত্রাকে ঘিরে ধরেছে। বাটিটা আজ আর মাজতে হবে না।
আমি হাসতে হাসতে বেসিনে গিয়ে মুখ ধুলাম।
বৌদি চেঁচিয়ে বললো তুই ওপরে যা আমরা যাচ্ছি।
বুঝলাম আমার কপালে আজ শনি লেখা আছে।
আমি দামিনী মাসির কাপরে হাতটা মুছে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। বেরোবার সময় ছোটমার গলা শুনতে পেলাম, তোর পকেটে রুমাল নেই।
গলার শব্দ শুনে একবার পেছন ফিরে তাকালাম, দেখলাম দামিনী মাসি হাসছে।
বারান্দায় এসে দেখলাম বাসু সঞ্জু চিকনা অনাদি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমাকে দেখে সঞ্জু ফিক করে হেসে ফেললো।
কিরে কোথায় ছিলি এতোক্ষণ, দেখতে পাই নি।
ওইতো পেছনে ছিলাম।
চিকনা, সঞ্জু সত্যি কথা বলছে।
একটু জল মেসানো আছে। অনাদি বললো।
হ। চিকনা হাসছে।
সঞ্জু কট কট করে তাকাচ্ছে চিকনার দিকে।
মিনতি কোথায়রে সঞ্জু, দেখতেই পাচ্ছি না।
বড়মার ঘরে।
কি করছে।
কি করে বলবো।
তুই দেখ গিয়ে। ওর দায়িত্ব এখন তোর।
চিকনা জোড়ে হেসে উঠলো।
তোকে ছেড়ে দিয়ে!
অনাদি হো হো করে হেসে ফেললো।
ঘর চ জুতায় ছাল খিঁচবো।
এবার আমি হেসে ফেললাম, সঞ্জু একেবারে গাঁইয়া ভাষা মুখ থেকে বার করে ফেলেছে।
আয়।
আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম, ওরা আমার পেছন পেছন।
ঘরে ঢুকতেই চিকনা সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলো। আমি একটা বার করে নিয়ে ওর হাতে দিলাম। চিকনা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।
কিরে!
ওরা সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। একমাত্র তুই আর আমি খাই।
সঞ্জু হাঁটু দিয়ে চিকনাকে গোঁতা দিলো।
অনি সব জেনে ফেলেছে। বাকিটুকু অনিকে বলে দেবো।
বলনা, বল। ওখানে গিয়ে পানা পুকুরে পুঁতবো।
আমি হাসছি।
কিরকম খেলি।
বার বার খেতে ইচ্ছে করছে।
চিকনার কথায় বাসু হো হো করে হেসে ফেললো।
সেই যে পর্শুদিন থেকে খাওয়া শুরু করেছিস, থেমেছিস। বাসু বললো।
থামবো মানে, অনির বিয়ে বলে কথা, প্রাণভরে খেয়ে যাবো।
তোর পেট থেকে সব টেনে বার করবো। সঞ্জু বললো।
অনি আর টানিসনা এবার দে, আমি সঞ্জু দু’জনকে টানতে হবে।
কেনো আর সিগারেট নেই, সঞ্জুকে একটা দে।
ভাগা ভাগি।
তুইতো অনাদিকে একটা দিলি না।
পকেটটা দেখ ইসলামদা দিয়েছে। রেখে দিয়েছে। পঞ্চায়েত না, ওখানে গিয়ে ফুটানি মারবে।
আমি হাসছি।
ওখানে গিয়ে যদি হামবড়ক্কি দেখিয়েছিস। আন্দোলন করে মাটি কাটা বন্ধ করে দেবো। এবার অনিমেষদা আছে বুঝলি।
চিকনার কথায় অনাদি বাসু এতোজোড়ে হেসে ফেললো মিত্রা মিলিরা পর্যন্ত চলে এলো। আমি হাসির চোটে খাটে বসে পরেছি। অনাদি বাসু তখনো হাসছে।
মিত্রা ভেতরে ঢুকলো।
কিরে এতো হাসির চোট কিসের।
চিকনা গম্ভীর হয়ে বললো। একটা দিলাম তাতেই অনি কুপোকাত।
তার মানে।
আমি তখনো হাসছি।
কিরে বলবি তো।
আমি হাসতে হাসতেই বললাম চিকনাকে জিজ্ঞাসা কর।



চিকনা লজ্জা পেয়ে বললো, যাঃ বার বার বলা যায়।
এমনভাবে বললো এবার মিত্রা মিলি হেসে ফেললো।
আস্তে আস্তে সকলে ঘরে এসে জড়ো হলো। ঘর ভড়ে গেলো। যে যার মতো বসলো।
সবার হাতেই কিছু কিছুনা জিনিসপত্র। আমি বুঝলাম ব্যাপারটা।
সবাই মিত্রার হাতে দিলো সব। বেশ মজা লাগছে। জ্যেঠিমনির মুখ থেকে সকালের কালো মেঘ সরে গেছে।
ইসিতা এগিয়ে এলো।
পিকু কোথায়।
নীচে।
কি করছে।
কতো দাদাই বলতো, খেলছে। এই নে তোর বরুণদা তোকে এটা দিয়েছে।
কি এটা।
খুলে দেখ।
আমি কাগজে মোড়া প্যাকেট খুলতেই ছবিটা বেরিয়ে এলো। সকালে যে ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে আমি আমার কথা বলেছি। বরুণদার দিকে তাকিয়ে হেসেফেললাম। মিত্রাকে ছবিটা দিলাম। ওর চোখটা ছল ছল করে উঠলো।
না ম্যাডাম না, আজ এসব কিছু হবে না। কনিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো।
বৌদিও একটা ফটো ফ্রেম আমার হাতে দিলো। আমি মৃদু হেসে বৌদির দিকে তাকালাম।
তুমি এ ছবি পেলে কোথায়!
বৌদি হাসছে।
যার কাছে ছিলো তার কাছ থেকে নিয়ে এসে তৈরি করেছি।
আমি মাথা নীচু করলাম, জানো বৌদি স্যারের কাছে যাওয়া হয়নি।
আজ আসবে।
স্যার আসবে!
ছবিটা মিত্রার হাতে দিলাম।
মিত্রা ছবিটা দেখে আমার দিকে তাকালো।
কোন ইয়ারের ছবি চিনতে পারিস।
আর চিন্তে হবে না, এই খাতাটা নে এবার শুরু কর। ওই ছবিতে বসে যেটা করে ফার্স্ট হয়েছিলি। কনিষ্ক চেঁচিয়ে উঠলো।
ছবিটা মিত্রার হাত থেকে ইসিতার হাতে গেলো, জ্যেঠিমনি বরুণদাও দেখলো। আস্তে আস্তে সবার হাতে চলে গেলো। সবার চোখেই বিষ্ময়। মিলি দৌড়ে এসে বৌদিকে জড়িয়ে ধরলো।
জানো বৌদি সে বছর আমরা সবে ইলেভেনে ভর্তি হয়েছি। মাঠে ছিলাম আমি অদিতি টিনা। ভেবেছিলাম প্রথমে কি শ্রুতি নাটক শুনবো। অনিদার গলা শুনে দৌড়ে অডিটোরিয়ামে চলে এসেছিলাম। পনেরো মিনিটের ডুয়েট, নিস্তব্ধ হলঘর, আমরা সব যেনো গিলে খাচ্ছিলাম দুজনকে।
সারা ঘর নিস্তব্ধ। মিলির কথা শুনছে।

ওরকম করিস না। ওর জন্য কতোদূর থেকে বয়ে এনেছে সুরো বল।
আমি হাসছি, মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
একবারে তাকাবি না, চোখ গেলে দেবো। তোর জন্য সুরোমাসি চিংড়িমাছের মোলা আর টক নিয়ে এসেছে। এতো খেয়েও আস মিটছে না।
আমি হাসছি।
কনিষ্ক। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
কি হলো ম্যাডাম।
কনিষ্ক সামনে এসে দাঁড়ালো।
নীপার হাত থেকে বাটিটা নাও।
কেনো!
নাওনা, আমি বলছি।
নীপা হাসছে।
সুরোমাসি এগিয়ে এলো।
ও মিত্রা যেটুকু আছে আমি সবাইকে ভাগ করে দিচ্ছি।
আগে দাও, তারপর ওর বাটি বসবে। কতো খায়। মিত্রা মুখ ভেঙচে বললো।
জ্যেঠিমনি এতোক্ষণ শুনছিলো কিছু বুঝতে পারছিলো না। এইবার হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই কি সব সময় ওর সঙ্গে এরকম করিস।
তুমি জানো না ও কিরকম তেঁদড়। সুরোমাসি কারুর জন্য নিয়ে আসে নি। খালি বুবুনের জন্য নিয়ে এসেছে।
তুইতো তখন খেলি। ছোটমা হাসতে হাসতে বললো।
ওতো একটু খানি টেস্ট করেছি।
অতোটা খালি। ওটা টেস্ট!
ছোটমার কথাকে পাত্তাই দিলো না মিত্রা।
কনিষ্ক তুমিতো পাওনি। একটু টেস্ট করো।
সুরোমাসি মাটির খাবরি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এলো। সবাইকে একটু একটু দিলো।
কনিষ্ক মুখে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। মার্ভেলাস, কি টেস্টরে অনি।
নীরু বটা রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো।
হাগুড়ে। কনিষ্ক গম্ভীর হয়ে বললো।
তুই খেলে দোষ নেই, আমি খেলেই হাগুড়ে।
জ্যেঠিমনি একবার মুখে দিয়ে দেখো। মিত্রা বললো।
এটা অনিদা স্পেশাল। মিলি বললো।
ওখানে গেলে এই দিয়ে এক জাম পান্তা খায়। মিত্রা বললো।
তুই খাস না। ছোটমা বললো।
আমার বাটি টেবিলে রাখা মাত্র বটা নীরু মিলি টিনা অদিতি দেবা মৈনাক সবাই হাত মারলো। আমি হাসছি।
কিরে তোরা সবাই খেয়ে নিলে ও খাবে কি।
আঃ বৌদি থাকনা, আমি অনেক খেয়েছি।
আ-মোলো ধর্মাবতার যুধিষ্টির। বড়মা এমন ভাবে বললো হাসির ঢেউ উঠলো।

টানা দু’মিনিট হাততালি। আমরা সবাই চেঁচিয়ে উঠেছিলাম থ্রি চিয়ার্স ফর অনিদা, থ্রি চিয়ার্স ফর মিত্রাদি। ইন্টার কলেজ কমপিটিসনে আমাদের কলেজ ফার্স্ট।
আমি মিলির দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। ওর স্বতঃস্ফূর্ততা আমাকে যেনো সেই দিনের অডিটেরিয়ামে নিয়ে গেলো। আমি যেনো চোখের সামনে দেখতে পেলাম আমি মিত্রা স্টেজে বসে আছি। দুজনের ডুয়েটে চলছে কচ দেবযানী শ্রুতি নাটক। কেউ কাউকে এক তিলার্ধ মাটি বিনাযুদ্ধে সেদিন ছেড়ে দিইনি।
কিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস, শুরু কর শুরু কর। কনিষ্ক এগিয়ে এলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ওর চোখ বলছে ওর ইচ্ছে আছে। হাসলাম।
বুড়ী বয়সে এখনো শখ আছে।
তার মানে। বৌদি বলে উঠলো।
তুই ওকে বুড়ী বলছিস। তাহলে তুই কি ?
যা খাতাটা নিয়ে আয়। ওই কারণে দামিনী মাসির ওখানে রাখা ভাঙা বাক্স থেকে খাতটা বার করে এনেছিলি।
মিত্রা মাথা নীচু করে হাসছে।
কনিষ্ক খাতাটা মিত্রার হাতে দিলো।
তুই শুরু কর। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
সবটা পারবো না একটুখানি করবো।
এরা মানবে।
মানবে।
আমি শুরু করলাম।
কচঃ দেহো আজ্ঞা, দেবযানী, দেবলোকে দাস
করিবে প্রয়াণ। আজি গুরুগৃহবাস
সমাপ্ত আমার। আশীর্বাদ করো মোরে
যে বিদ্যা শিখিনু তাহা চিরদিন ধরে
অন্তরে জাজ্জ্বল্য থাকে উজ্জ্বল রতন,
সুমেরুশিখর শিরে সূর্যের মতন
অক্ষয়কিরণ।
দেবযানীঃ মনোরথ পুরিয়াছে
পেয়েছ দুর্লভ বিদ্যা আচার্যের কাছে,
সহস্রবর্ষের তবে দুঃসাদ্য সাধনা
সিদ্ধ আজি, আর-কিছু নাহি কি কামনা,
ভেবে দেখো মনে মনে।
কচঃ আর কিছু নাহি।
দেবযানীঃ কিছু নাই! তবু আরবার দেখো চাহি,
অবগাহি হৃদয়ের সীমান্ত অবধি
করহ সন্ধান ; অন্তরের প্রান্তে যদি
কেনো বাঞ্ছা থাকে---কুশের অঙ্কুর সম
ক্ষুদ্র, দৃষ্টি-অগোচর, তবু তীক্ষ্ণতম।
কচঃ আজি পূর্ণ কৃতার্থ জীবন। কোনো ঠাঁই
মোর মাঝে কোনো দৈন্য কোনো শূন্য নাই,
সুলক্ষণে!
দেবযানীঃ তুমি সুখী ত্রিজগৎ মাঝে।
যাও তবে ইন্দ্রসোকে আপনার কাজে
উচ্চশিরে গৌরব বহিয়া। স্বর্গপুরে
উঠিবে আনন্দধ্বনি, মনোহর সুরে
বাজিবে মঙ্গলশঙ্খ, সুরাঙ্গনাগণ
করিবে তোমার শিরে পুষ্প বরিষণ
সদ্যছিন্ন নন্দনের মন্দারমঞ্জরী।
স্বর্গপথে কলকণ্ঠে অপ্সরী কিন্নরী
দিবে হুলুধ্বনি। আহা, বিপ্র, বহু ক্লেশে
কেটেছে তোমার দিন বিজনে বিদেশে
সুকঠোর অধ্যয়নে। নাহি ছিল কেহ
স্মরণ করায়ে দিতে সুখময় গেহ,
নাবিরাতে প্রবাসবেদনা। অতিথিরে
যথাসাধ্য পূজিয়াচি দরিদ্রকুটিরে
যাহা ছিল দিয়ে। তাই ব’লে স্বর্গসুখ
কোথা পাবে, কোতা হেথা অনিন্দিত মুখ
সুরললনার ? বড়ো আশা করি মনে,
আতিথ্যের আপরাধ রবে না স্মরণে
ফিরে গিয়ে সুখলোকে।
কচঃ সুকল্যান হাসে
প্রসন্ন বিদায় আজি দিতে হবে দাসে।
দাবযানীঃ হাসি ? হায় সখা, এ তো স্বর্গপুরী নয়।
পুষ্পে-কীট সম হেথা তৃষ্ণ জেগে রয়
মর্ম-মাঝে, বাঞ্ছা ঘুরে বাঞ্ছিতের ঘিরে,
লাঞ্ছিত ভমর যথা বারম্বার ফিরে
মুদ্রিত পদ্মের কাছে। হেথা সুখ গেলে
স্মৃতি একাকিনী বসি দীর্ঘশ্বাস ফেলে
শূন্যগৃহে ; হেথায় সুলভ নহে হাসি।
যাও বন্ধু, কী হইবে মিথ্যা কাল নাশি,
উৎকণ্ঠিত দেবগণ।---
যেতেছ চলিয়া ?
সকলি সমাপ্ত হল দু কথা বলিয়া ?
দশ শত বর্ষ পরে এই কি বিদায়!
কচঃ দেবযানী, কী আমার অপরাধ !
দেবযানীঃ হায়,
সুন্দরী অরণ্যভূমি সহস্র বৎসর
দিয়েছে বল্লভছায়া, পল্লবমর্মর---
শুনায়েছে বিহঙ্গকুজন---তারে আজি
এতই সহজে ছেড়ে যাবে ? তরুরাজি
ম্লান হয়ে আছে য়েন, হেরো আজিকার
বনচ্ছায়া গাঢ়তর শোকে আন্ধকার,
কেঁদে ওঠে বায়ু, শুষ্ক পত্র ঝ’রে পড়ে---
তুমি শুধু চলে যাবে সহাস্য-অধরে
নিশান্তের সুখস্বপ্নসম ?
কচঃ দেবযানী,
এ বনভূমিরে আমি মাতৃভূমি মানি,
হেথা মোর নবজন্মলাভ। এর ’পরে
নাহি মোর অনাদর---চিরপ্রীতিভরে
চিরদিন করিব স্মরণ।
দেবযানীঃ এই সেই
বটতল, যেথা তুমি প্রতি দিবসেই
গোধন চরাতে এসে পড়িতে ঘুমায়ে
মধ্যাহ্ণের খর তাপে ; ক্লান্ত তব কায়ে
অতিথিবৎসল তরু দীর্ঘ ছায়াখানি
দিত বাছাইয়া, সুখসুপ্তি দিত আনি
ঝর্ঝরপল্লবদলে করিয়া বীজন
মৃদুস্বরে---যেয়ো সখা, তবু কিছুক্ষণ
পরিচিত তরুতলে বোসো শেষবার,
নিয়ে য়াও সম্ভাষণ এ স্নেহছায়ার,
দুই দন্ড থেকে যাও, সে বিলম্বে তব
স্বর্গের হবে না কোনো ক্ষতি।
কচঃ অভিনব
ব’লে ? যেন মনে হয় বিদায়ের ক্ষণে
এই সব চিরপরিচিত বন্ধুগণে ;
পলাতক প্রিয়জনে বাঁদিবার তরে
করিছে বিস্তার সবে ব্যগ্র স্নেহভরে
নূতন বন্ধনজাল, অন্তিম মিনতি,
অপূর্ব সৌন্দর্যরাশি। ওগো বনস্পতি,
আশ্রিতজনের বন্ধু, করি নমস্কার।
কত পান্থ বসিবেক ছায়ায় তোমার,
কত ছাত্র কতদিন আমার মতন
প্রচ্চন্ন প্রচ্ছায়তলে নীরব নির্জন
তৃণাসনে পতঙ্গের মৃদুগুঞ্জস্বরে
করিবেক অধ্যয়ন, প্রাতঃস্নান পরে
ঋষিবালকেরা আসি সজল বল্কল
শুকাবে তোমার শাখে, রাখালের দল
মধ্যাহ্নে করিবে খেলা---ওগো, তারি মাঝে
এ পুরানো বন্ধু যেন স্মরণে বিরাজে।

দেবযানীঃ মনে রেখো আমাদের হোমধেনুটিরে ;
স্বর্গসুধা পান করে সে পুণ্যগাভীরে
ভুলো না গরবে।
কচঃ সুধা হতে সুধাময়
দুগ্ধ তার ; দেখে তারে পাপক্ষয় হয়,
মাতৃরূপা, শান্তিস্বরূপিণী, শুভ্রকান্তি
পয়স্বিনী। না মানিয়া ক্ষুধাতৃষ্ণা শ্রান্তি
তারে করিয়াছি সেবা ; গহনকাননে
শ্যামশস্প স্রোতোস্বিনীতীরে তারি সনে
ফিরিয়াছি দীর্ঘ দিন ; পরিতৃপ্তিভরে
স্বেচ্ছামতে ভাগ করি নিম্নতট-’পরে
অপর্যাপ্ত তৃণরাশি সুস্নিগ্ধ কোমল
আলস্যমন্থরতনু লভি তরুতল
রোমন্থ করেছে ধীরে শুয়ে তৃণাসনে
সারাবেলা ; মাঝে মাজে বিশাল নয়নে
সকৃতজ্ঞ শান্ত দৃষ্টি মেলি, গাঢ়স্নেহ
চক্ষু দিয়া লেহন করেছে মোর দেহ।
মনে রবে সেই দৃষ্টি স্নিগ্ধ অচঞ্চল,
পরিপুষ্ট শুভ্র তনু চিক্কন পিচ্ছল।
দেবযানীঃ আর মনে রেখো আমাদের কলস্বনা
স্রোতোস্বিনী বেণুমতী।
কচঃ তারে ভুলিবনা
বেণুমতী, কত কুসুমিত কুঞ্জ দিয়ে
মধুকণ্ঠে আনন্দিত কলগান নিয়ে
আসিছে শুশ্রুষা বহি গ্রম্যবধূসম
সদা ক্ষিপ্রগতি, প্রবাসসঙ্গিনী মম
নিত্যশুভব্রতা।
দেবযানীঃ হায় বন্ধু, এ প্রবাসে
আরো কোনো সহচরী ছিল তব পাশে,
পরগৃহবাসদুঃখ ভুলাবার তরে
যত্ন তার ছিল মনে রাত্রিদিন ধ’রে---
হায় রে দুরাশা!
কচঃ চিরজীবনের সনে
তার নাম গাঁথা হয়ে গেছে।
দেবযানীঃ আছে মনে---
যেদিন প্রথম তুমি আসিলে হেথায়
কিশোর ব্রাহ্মণ, তরুণ-অরুণ-প্রায়
গৌরবর্ণ তনুখানি স্নিগ্ধদীপ্তি-ঢালা,
চন্দনে চর্চিত ভাল, কণ্ঠে পুষ্পমালা,
পরিহিত পট্টবাস, অধরে নয়নে
প্রসন্ন সরল হাসি, হোথা পুষ্পবনে
দাঁড়ালে আসিয়া---
কচঃ তুমি সদ্য স্নান করি
দীর্ঘ আদ্র কেশজালে নবশুক্লাম্বরী
জ্যোতিস্নাত মূর্তিমতী উষা, হাতে সাজি,
একাকী তুলিতেছিলে নব পুষ্পরাজি
পূজার লাগিয়া। কহিনু করি বিনতি,
তোমারে সাজে না শ্রম, দেহো অনুমতি
ফুল তুলে দিব দেবী!
দেবযানীঃ আমি সবিস্ময়
সেইক্ষণে শুধানু তোমার পরিচয়।
বিনয়ে কহিলে, আসিয়াছি তব দ্বারে,
তোমার পিতার কাছে শিষ্য হইবারে---
আমি বৃহস্পতিসুত।
কচঃ শঙ্কা ছিল মনে,
পাছে দানবের গুরু স্বর্গের ব্রাহ্মণে
দেন ফিরাইয়া।
দেবযানীঃ আমি গেনু তাঁর কাছে।
হাসিয়া কহিনু, পিতা, ভিক্ষা এক আছে
চরণে তোমার। স্নেহে বসাইয়া পাশে
শিরে মোর দিয়ে হাত শান্ত মৃদু ভাষে
কহিলেন, কিচু নাহি অদেয় তোমারে।
কহিলাম, বৃহস্পতিপুত্র তব দ্বারে
এসেছেন, শিষ্য করি লহো তুমি তাঁরে
এ মিনতি।--- সে আজিকে হল কত কাল!
তবু মনে হয়, যেন সেদিন সকাল।
কচঃ ঈর্ষাভরে তিনবার দৈত্যগণ মোরে
করিয়াছে বধ ; তুমি, দেবী, দয়া করে
ফিরায়ে দিয়েছ মোর প্রাণ---সেই কথা
হৃদয়ে জাগায়ে রবে চিরকৃতজ্ঞতা।

দেখলাম মিত্রা আর কনটিনিউ করছে না। আমি খাতা থেকে মুখ তুললাম। ও মাথা দোলাচ্ছে। ওর চোখ চিক চিক করছে। বুঝলাম এটা দুঃখের অশ্রু নয়, অনন্দের অশ্রু। মিলিরা এসে জড়িয়ে ধরলো মিত্রাকে। দেখলাম দরজার সামনে দাদা, মল্লিকদা, কাকা, উনা মাস্টার, ডাক্তারদাদা। বিস্ময় চোখে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে। ছোটমা দৌড়ে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। ডাক্তারদাদার হাত ধেরে ভেতরে আনলো। পেছন পেছন সবাই।
বাবাঃ, অনিবাবু যে আবৃত্তি টাবৃত্তি করেন এটা তো জানতাম না।
আমরাও জানতাম না। বৌদির আনা ছবিটা দেখে জানলাম।
ছোটমা ফটো ফ্রেমটা এগিয়ে দিলো ডাক্তারদাদার হাতে।
কলেজ লাইফের ছবি, এই দুটোর, দেখুনতো চিনতে পারেন কিনা ?
ডাক্তারদাদা দেখে হেসে ফেললেন।
কিরে কনিষ্ক তোরা জানতিস।
হ্যাঁ। আমাদের কলেজের ফেস্টেও এইটা করে ওরা প্রথম হয়েছিলো। তখন কলেজে কলেজে অনি-মিত্রার জুটির একটা কদর ছিলো সব কলেজে।
কিগো এডিটর বান্ধবীকে কিছু বলো। সকাল থেকে অনেক বকছিলো।
মরণ। ও আবার কি বলবে গা।
বড়মার কথায় ঘর ভর্তি লোক হেসে ফেললে।
আমায় কিছু বলতে হলো ? দাদা ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললেন।
ডাক্তারদাদা মাথা দোলাচ্ছেন। হাসছেন।
বটা একটা বিশাল কিছু নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
নীরু এগিয়ে গেলো। দে দে অনিকে আমাদের উপহার।
দাঁড়া স্যার তুলে দেবে ওর হাতে। কনিষ্ক বললো।
আমি কেনো বাবা, তোদের জিনিষ তোরা দে। ডাক্তারদাদ বললো।
না স্যার, এটা আপনি আমাদের হয়ে অনির হাতে তুলে দিন।
তারমানে! নিশ্চই এমন কিছু আছে যার জন্য অনির কাছে মার খেতে পারিস।
তা আছে।
আমি নীরুর দিকে তাকিয়ে আছি।
রাতের খাওয়াটা খেয়ে নিই, তারপর তুই কিমা করিস।
সবাই হাসছে।
ডাক্তারদাদা এগিয়ে এসে লেমিনেট করা ফটোটা দিলেন। বুঝলাম এটা নিশ্চই আমার কোনো ফটো হবে। বেশ ভারী।
কাগজটা খুলেই আমি হেসে ফেললাম। ছোটমা উঁকি মেরে আরো জোরে হো হো করে হেসে ফেললো।
আ মোলো ও ছোটো তুই অমন ভাবে হাসিস কেনো।
ছোটমা কোনো কথা বলে না খালি হাসে।
কি ছোটমা কেমন দিয়েছি বলো ? নীরু বললো।
ছোটমা আমার হাত থেকে নিয়ে সবার দিকে ফটোটা ঘুরিয়ে দিলো। জ্যেঠিমনির দিকে তাকিয়ে বললো, দেখুনতো দিদি এই ওঝাটাকে চিনতে পারেন কিনা। জ্যেঠিমনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে হো হো করে হেসেফেললো।
ঘরের সবাই হাসছে। এমনকি কাকা উনা মাস্টার পর্যন্ত।। পিকুও ছবিটা ভালো করে দেখছে।
হ্যাঁরে এটা তুই কবে সেজেছিলি।
এটা অনির লেটেস্ট কালেকসন কাকা, পর্শুদিন। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি হাসছি।
ইসি আমার কাছে এগিয়ে এলো। এটা কবে সেজেছিলি।
এটা জেনুইন। তোর ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা কর।
সে ঝেঁটার বাড়ি আপনিতো খাননি ম্যাডাম। তাহলে ডাক্তার হয়ে যেতেন।
নীরুর কথায় ঘর ভর্তি সবাই হেসে ফেললো।
একমাত্র তুই খেয়েছিলি কি বল। বটা বললো।
তোকে কথা বলতে বলেছি। একবার বলেছিনা, বড়োরা যখন কথা বলবে ছোটেদের খালি শুনতে হয়।
নীরুর কথা বলা শেষ হবার আগেই বাবাগো বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
বুঝলাম বটা সঠিক জায়গায় হাত মেরেছে। গম্ভীর। মিলিরা মুচকি মুচকি হাসছে।
ডাক্তারদাদা বলে উঠলো কিরে নীরু চেঁচিয়ে উঠলি কেনো।
নীরু কোনো কথা বলতে পারছে না। এক দৃষ্টে বটার দিকে তাকিয়ে আছে। বটার ভাবলেশহীন মুখ। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
কিরে। চোখের ইশারায় আমাকে জিজ্ঞাসা করলো।
আমি হাসছি।
মিত্রা বুঝতে পারলো। বটা কি করেছে। মুখের কাছে হাত নিয়ে এসে হেসে ফেললো।
কনিষ্ক হাসি হাসি মুখে নীরুর পিঠে হাত রাখলো।
তোর জন্য বটা এরকম হয়েছে। নীরু খেঁকিয়ে উঠলো।
আবার হাসির রোল।
হঠাৎ আমার গলা আর মিত্রার গলায় শ্রুতি নাটকটা বেজে উঠলো। দেবা মোবাইলে রেকর্ড করেছে।

তুই রেকর্ড করেছিস ! কনিষ্ক বললো।
লাইভ।
সবাই দেবার কাছে গেলো। ওর মোবাইলে উঁকি মারছে। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা হাসছে। ইসি পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
পাগলদের কান্ড দেখছো।
ইসি আমার দিকে তাকালো।
জানিস অনি এই পাগলামির মধ্যে একটা আনন্দ আছে। এই আনন্দটা আবার সকলে উপভোগ করতে পারে না।
মিত্রা ইসির দিকে তাকিয়ে।
অনেকদিন পর মন খুলে একটু আনন্দ উপভোগ করতে পারছি। তোর বরুণদাকে দেখেছিস। কেমন ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে চারদিকে।
তুই আবার ইমোশন্যাল হয়ে পরছিস ?
হচ্ছিনারে, তুই এমন ভাবে পরিবেশ রচনা করলি বাধ্য হচ্ছি ইমোশন্যাল হয়ে যেতে। মায়ের মুখের দিকে একবার তাকা। আনন্দটা যে এই ভাবে উপভোগ করা যায় এতদিন জানতেন না। তুই সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করে সেই আনন্দটা শেয়ার করে নিচ্ছিস।
ছোটমা। চেঁচিয়ে উঠলাম।
ছোটমা তখন দেবাদের মোবাইলে হামলে পরেছে। আমার দিকে তাকালো।
চা হবে না এখন, ভাগ।
ও কবিতা মা একটু দেখনা ওরা চা করেছে কিনা নিয়ে আয়। বড়মা বললো।
দেখলে ডাক্তার গলার স্বর কি নরম। ছেলে বলেছে। আমি বললে এখুনি ছেঁচকে উঠতো।
বড়মা এমন ভাবে দাদার দিকে তাকালো, ডাক্তারদাদা হো হো করে হেসে ফেললো।
সবাই ঘুরে তাকিয়েছে। ইসি আমার মুখের দিকে তাকালো।
তুই পারিশও বটে।
জানিশ ইসি মিত্রাকে জিজ্ঞাসা কর এই ডুয়েটটা দারুন এনজয়বেল।
নীরু আমার টেবিলে ওঝার ছবিটা নিয়ে এসে রাখলো। বেশ ব্রাইট লাগছে। সবাই ছবিটার দিকে তাকায় আর হাসে। বটা নীরুরু পেছনে এঁটুলে পোকার মতো লেগে আছে।
আচ্ছা অনি এরা ডাক্তার ?
ইসি আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
তোর কি মনে হয়।
ইসি হাসছে। 
 
 
 
 
 
 
 
Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks